বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন
আফতাব চৌধুরী
এখন বর্ষাকাল। আকাশ কাঁপিয়ে মেঘের ডানায় ভর করে যখন-তখন শুরু হয় ঝমঝম বৃষ্টি। তবে তাই বলে বৃষ্টির উপর রাগ করলে কিন্তু চলবে না। প্রকৃতি তার আপন গতিপথে চলবে- এটাইতো স্বাভাবিক। তাই প্রকৃতিকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে নিজেকেই। কারণ বৃষ্টির কারণে তো আর নিজে অপ্রস্তুত হলে চলবে না। অতএব এ বৃষ্টির প্রস্তুতি নিয়েই এ আয়োজন বাদল ধারার বর্ষা নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে, তিল ঠাঁই আর নাহিরে ওগো। আজ তোরা যাসনে ঘরের বহিরে। কবিগুরু বলে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তাই বলে তো আর কাজ কর্ম ফেলে ঘরে বসে থাকা যাবে না। সকালে হয়তো আপনি দেখেছিলেন আকাশ রোদে ঝলমল অথচ বাইরে বের হবার পরই নামল অঝোর ধারায় বৃষ্টি। ভিজে গেল শখের সুতি পোষাকটা। আর তাই এ সময়ে কেমন কাপড় পরা উচিৎ সে পরামর্শ দিয়েছেন লিপি খন্দকার। বলেন, বর্ষাকালের এ সময়টায় সিন্থেটিক কাপড়ের পোষাকটাই পরা উচিৎ। সিন্থেটিক যদি বৃষ্টিতে ভিজে তাহলেও চিন্তা নেই, এ ধরনের কাপড় একটু বাতাসেই শুকিয়ে যায় আর ভিজে গেলেও গায়ে আটকে থাকে না।
তিনি আরও জানান, সিন্থেটিক ছাড়াও সিল্ক বা জর্জেট কাপড়ও এ বর্ষায় বেশ উপযোগী। তবে যারা সুতি ছাড়া এক্কেবারেই অন্য কোনও কাপড়ের পোশাক পরতে পারেন না, তাদের জন্য লিপির পরামর্শ হলো, এখন অনেক পাতলা ও আরামদায়ক সুতি কাপড় পাওয়া যায়। এ ধরনের কাপড়ের সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে শিফন কাপড়ের ওড়না বেশ মানানসই। কাপড় সংরক্ষণের জন্য ধোঁয়া কাপড় অবশ্যই ফ্রেশনার দিয়ে রাখুন। আবার গহনার ক্ষেত্রেও কিছুটা সতর্ক থাকা দরকার। এ সময় যতটা সম্ভব গহনা ব্যবহার না করাই ভাল। কাজেই সেগুলোও তুলে রাখলে টিস্যু বা পাতলা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা ভাল। এ-তো গেল ইমিটেশনের গহনার কথা। ব্যবহার করতে বারণ বলে পাঠকরা আবার মন খারাপ করবেন না যেন, কারণ ব্যবহারের জন্য বেলি ফুলের গহনাগুলো খুবই অসাধারণ, আর একথাটা সব ডিজাইনারই বলেছেন। শিফন কাপড়ের যেহেতু রঙ ওঠে না তাই ওড়না হিসেবে বৃষ্টির দিনে এটা ব্যবহার করা যায়। আর পাতলা সুতি কাপড়ের সালোয়ার-কামিজ পরা যায় এ সময়। আবার এতে লাইলেন দিয়ে ডিজাইনও করা যায়। এছাড়া ভয়েল, চেক স্ট্রাইপ প্রভৃতি ফেব্রিকের পোশাকও এ সময় ভাল লাগবে।
বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। আর তাই এ সময় সহজেই খাবার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর খাবারের জলীয় অংশ কমে যাবার কারণে খাবারের সংরক্ষণ ক্ষমতাও কমে যায়। তাই খাবার ফ্রিজের বাইরে না রাখাই ভাল, আবার ফ্রিজেও খাবার দু’দিনের বেশি রাখা ঠিক নয়। তবে খাবার যদি সংরক্ষণ করতেই হয় তবে, তা ভাল করে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে রাখতে হবে। আর খাবারটাও প্লাস্টিকের পাত্রে না রেখে কাচের পাত্রে রাখা উচিৎ। মোট কথা, বাতাস যেন ঠিকমতো চলাচল করতে পারে এমন অবস্থায় খাবার রাখতে হবে।
বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি ফাঙ্গাস দেখা যায় বিভিন্ন রকম আচারে। আচার প্রসঙ্গে শারমিন বলেন, আচার সংরক্ষণের সময় খেয়াল রাখতে হবে আচার যেন পুরোপুরি তেলে ডুবে যায়। এছাড়া আচারে ভিনেগার দিয়েও ভাল রাখা সম্ভব বহুদিন। যেতে যেতে পথে আগেইতো বলেছিল বৃষ্টিকে ভয় পেয়েতো আর ঘরে বসে থাকা চলবে না। বাইরে বেরোতেই হবে, তবে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোনও গাড়ি এসে যেন কাদা লাগিয়ে দিয়ে না যায়। আর যদি রিক্সায় ওঠেন তাহলে জিজ্ঞাসা করে নিন পর্দা আছে কিনা। তা না হলে কিন্তু বিপদে পড়বেন আপনিই।
আর যারা গাড়ি নিয়ে বের হবেন তাদেরও থাকতে হবে সমান সতর্ক। যে-সব রাস্তায় পানি জমে থাকে সে-সব রাস্তায় গাড়ি না চালানোই ভাল। আর যদি ওইসব রাস্তা এড়ানো সম্ভব না হয় তাহলে চালককে সতর্ক হতে হবে গাড়ির সাইলেন্সার বক্স যাতে না ভিজে যায়। আর যদি একান্তই ডুবে যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে নিতে হবে গাড়ির হসপিটালে। রাস্তায় কাদা থাকবে, তাই গাড়ির প্রতি নিতে হবে বাড়তি যতœ। নিয়মিত থাকাটা জরুরী। প্রয়োজনে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। বৃষ্টিতে রাস্তা থাকে পিচ্ছিল, তাই গাড়ি চালাতেও দরকার বাড়তি সতর্কতা। তা না হলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
যারা বের হচ্ছেন মোটরসাইকেল নিয়ে, তাদের সর্বপ্রথম দেখা দরকার বর্ষাতি নেওয়া হয়েছে কিনা। আর মোটরসাইকেল চালানোর সময় চালককে হেলমেটের ওপরের গদ্বাসটি খুলে তা ব্যবহার করতে হবে। গদ্বাস লাগানো থাকলে আপনার সমস্যা হবে। যেহেতু রাস্তা পিচ্ছিলই থাকে, তাই গাড়ি ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে না চালানো ভাল। আর চালানোর সময় চেপে রাখুন দু’টি ব্রেক। নিজে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে সমস্যা নেই কিন্তু চিন্তা সঙ্গের মোবাইলটি নিয়ে। এটি ভিজে গেলেও তো সর্বনাশ। তাই সবাই সতর্ক থাকুন যাতে মোবাইলটি ভিজে না যায় আর যদি ভিজেই যায় তাহলে সেটটি বন্ধ করে ভেতরের পানি ভাল মতো ঝেড়ে, হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কোনও ওয়ার্কশপে নিয়ে যান। সবচেয়ে ভাল হয় যদি সঙ্গে মোবাইলের সাইজের বা মোবাইলের চেয়ে বড় প্লাস্টিকের ব্যাগ রাখেন। বৃষ্টি শুরু হলে ব্যাগে মোবাইলটি ভরে ফেলুন। তাহলে বৃষ্টির পানি সহজে মোবাইলকে ভেজাতে পারবে না।
তারপর ? যদি ইচ্ছা হয় নেমে পড়–ন রাস্তায় বা উঠুন বাড়ির ছাদে। দেখুন বৃষ্টিতে ভিজতে কত মজা। বর্ষার সাজ রিমি রিমঝিমি রিমঝিম নামিলো দেয়া-বর্ষার এ আষাঢ়ে দিনে দেয়া তো নামবেই কিন্তু তাই বলে সাজগোজটাতো বাদ দেওয়া যাবে না। বর্ষার সাজটা কেমন হবে সেটা জানিয়েছেন বিউটি এক্সপার্ট ফারজানা শাকিল। ফারজানা শাকিল বলেন, সাজার ক্ষেত্রে আমাদের বাঙ্গালী যে কনসেপ্ট আছে সেটা প্রায় একই থাকে। শুধু এই দিনে দরকার বাড়তি ভাল। এসময় ঠোঁটে গøসি লিপস্টিক একেবারেই মানানসই নয়। বর্ষার সাজে ফাউন্ডেশন ও লিপস্টিক দু’টোই ম্যাট হবে। চোখে অবশ্যই ওয়াটার প্রæফ আইলাইর্নার ও মাসকারা থাকবে। তবে যে কোনও সাজে চোখ দু’টোকে যদি সুন্দর করে সাজানো যায় তাহলে মেকআপের চুলটাকে গর্জিয়াসভাবে সাজানো যায়। বাজারে এখন হরেক রকমের খোপার কাটা ঘুঙুর পাওয়া যায়। এগুলোর ব্যবহার সাধারণ একটা খোপাকে অসাধারণ করে তোলে। আরও আছে নানা ধরনের ফেন্সি ক্লিপ। ফ্যাশনেবল এ ছোট ক্লিপগুলো দিয়েও চুলটাকে সুন্দর করে সাজানো যায়। পোশাকের ব্যাপারে ফারজানা শাকিল বলেন, সিন্থেটিক কাপড়ের কথা। প্রকৃতির সঙ্গে ম্যাচ করে এ সময় বেগুনি, নীল প্রভৃতি ওঙ্গেও পোশাক বেশি মানানসই।
আর স্যান্ডালের ব্যাপারে পরামর্শ, যদিও ফ্লাট স্যান্ডাল বর্তমানে খুব জনপ্রিয় তবুও বর্ষার এ দিনে ফ্লাট স্যান্ডাল একেবারেই অনুপযোগী। আবার পেন্সিল হিলও পরা যাবে না। এ সময় একটু উঁচু বা ছোট হিলের স্যান্ডাল পরতে হবে যাতে রাস্তায় জমে থাকা পানি পায়ে না লাগে। বর্ষার এ দিনে ফারজানা শাকিল বিশেষভাবে যতœ নিতে বলেন পায়ের। কারণ স্যাঁতসেঁতে সময়টায় নোংরা পানি বিভিন্ন স্কিন ডিজিজ এবং পাচড়ার জন্ম দেয়। এজন্য পা সব সময় ধুয়ে মুছে রাখতে হবে।
বর্ষাকালে পেকামাকড়ের ঘর থাকে না, তাই এগুলো বাসা করে বইয়ের ভিতর। আর নষ্ট করে আপনার প্রিয় বইগুলো। তাই আপনার প্রিয় বইগুলোকে পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচাতে বইয়ের সেল্ফ এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে কোনওভাবেই বৃষ্টির পানি আপনার বইকে স্পর্শ করতে না পারে। আর নিয়ম করে বইগুলো রোদে দিন। এতে বইয়ের স্যাঁতসেতে ভাবটি দূর হবে। এ-তো গেল প্রকৃতির উপায়। আর বইগুলোকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে ব্যবহার করুন কৃত্রিম উপায়, মানে কীটনাশক। এগুলো আপনার বইকে নিরাপদ রাখবে। বইয়ের তাক বানান ভাল কাঠ দিয়ে আর বইকে নিয়মিত নড়াচড়া করুন, তাহলে খুব সহজে পোকা আপনার বইকে তার ঘর বানাবে না। সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ২৯.০৬.২০২২